ঢাকা , শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​আর্থিক চাপে বিদ্যুৎ খাত

গরমে এবারও ভোগাবে লোডশেডিং

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ৩০-০১-২০২৫ ১২:৪৭:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০১-২০২৫ ১২:৪৭:৩০ অপরাহ্ন
গরমে এবারও ভোগাবে লোডশেডিং প্রতীকী ছবি
বিপুল পরিমাণ দায়দেনার কারণে আর্থিক চাপে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আর বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাঁধে এখন ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া। এরই মধ্যে পেট্রোবাংলাকে মার্কিন কোম্পানি শেভরন ও পিডিবিকে ভারতীয় কোম্পানি আদানি বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, বড় অঙ্কের আর্থিক চাপ থাকায় এবারও গরমে ব্যাহত হতে পারে বিদ্যুতের স্বাভাবিক সরবরাহ।

আর্থিক টানাপড়েন আর ডলার সংকটে গত তিন বছর ধরেই দেখা যায়, পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও বন্ধ রাখতে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে গরমের সময় সইতে হয় তীব্র লোডশেডিং।

জেঁকে বসা আর্থিক সে বেহাল দশা থেকে এখনো বেরোতে পারেনি বিদ্যুৎ খাত। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দাবি, পিডিবির কাছে পাওনা ঠেকেছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। আর এ অর্থ সংকটের কারণে এবারও মিলছে না গরমে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন,সরকারে অর্থ সংকট চলছে, সেটা সবাই জানে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের হাত-পা বাধা। অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয়। যা গরমে প্রভাব ফেলবে।

শুধু তাই নয়, ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে, তা জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি আদানি। নতুবা গুণতে হবে জরিমানা। একই অঙ্কের টাকা পায় পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ির মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

এছাড়া গ্যাসের মূল্য বাবদ পেট্রোবাংলার পাওনা ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৩ হাজার কোটি টাকার দেনায় জর্জরিত সরকারি বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান পিডিবি।

একই চিত্র জ্বালানি খাতেও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি করা ভ্যাট-শুল্ক, শেভরনের পাওনা আর এলএনজি আমদানি বাবদ ২২ হাজার কোটি টাকার বকেয়া এখন পেট্রোবাংলার কাঁধে। এরই মধ্যে বকেয়ার অন্তত আংশিক পরিশোধে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছে গ্যাস উত্তোলনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান শেভরন।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে অর্থ নেয়ায় চাপ কিছুটা কমছে। তবে প্রতি সপ্তাহেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ টার্গেট রেখে প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। দুশ্চিন্তা অবশ্যই রয়েছে। তাই ডলারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বিপুল দায়দেনা আর আর্থিক সংকটের কারণে এবারও গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাই পরামর্শ আসছে, জনজীবন সহনীয় আর অর্থনীতি গতিশীল রাখার তাগিদেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অর্থ ছাড়ে অগ্রাধিকার দেয়ার।জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, যেভাবেই হোক যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যাতে বিড়ম্বনায় পড়বে সাধারণ মানুষ।

বিদ্যুৎ খাতের দেনা পরিশোধে চলতি সপ্তাহে এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। তবে ব্যাপক দায়দেনার বিপরীতে এ অঙ্ক নগণ্য।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বেশ ভুগিয়েছে অর্থ সংকট, ডলারের অপ্রতুলতা আর বিপুল পরিমাণ বকেয়ার মতো বিষয়গুলো। এগুলো কতটা মুন্সিয়ানার সঙ্গে সামাল দেয়া যায়, তারওপরই অনেকটা নির্ভর করছে এবারের গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি- এমনটিই মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র: সময় সংবাদ

বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ